নদী ও সড়কপথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ১৯৯০ সালের দিকে সহজে গড়ে উঠেছে ভৈরবের এ শিল্প এলাকা। এখন তা ১০ হাজার ছোট-বড় কারখানায় রূপ নিয়েছে। কাজ করছে আড়াই লাখ শ্রমিক।
নদী ও সড়ক পথে দারুণ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে দেশ স্বাধীনের পর থেকেই শিল্পে সমৃদ্ধ ভৈরব। কয়লা, চাল, ডাল ও পাটকলের পাশাপাশি দেশের সবচেয়ে বড় মাছের আড়ৎ হিসেবে পরিচিতি ভৈরবের তবে এখন আর মাছের জন্য নয়, ভৈরবকে মানুষ নতুনভাবে চিনছে জুতার শহর হিসেবে। গত ২৫-৩০ বছরে ভৈরবে গড়ে উঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ জুতার ব্যবসা। বাস থেকে নেমে যেদিকেই তাকাবেন এখন শুধু ছোট ছোট জুতার কারখানা চোখে পড়বে। কারখানাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বড় বড় শপিংমলও। বিস্ময় জাগাবে জুতাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা ব্যাক ওয়ার্ড লিঙ্কেজ ব্যবসাও।
বাংলাদেশ এসএমই ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, ভৈরব পৌর এলাকা ও উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের কমপক্ষে ২০টি গ্রামে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০ হাজারেরও বেশি জুতা তৈরির কারখানা। দুই থেকে আড়াই লাখ শ্রমিক ভৈরবের এ জুতা শিল্পে জড়িত। জুতার ব্যাগ, চামড়া, রেক্সিন, ফোম, হিল, কভার, সুতা, বোতামসহ ব্যাকওয়ার্ড শিল্প নিয়েও গড়ে উঠেছে অন্তত এক হাজারের বেশি দোকান ও কারখানা। সেখানেও কাজ করছে ১৫ থেকে ২০ হাজার শ্রমিক। পাশাপাশি বিক্রয় কেন্দ্র গড়ে উঠেছে এক হাজারের বেশি।
ভৈরব পাদুকা শিল্প মালিক সমিতির তথ্যমতে, ভৈরবের বর্তমানে জুতার কারিগর রয়েছে ৫০ হাজারের বেশি। শ্রমিকসহ এ সংখ্যা প্রায় দুই লাখের মতো। ১০ হাজার কারখানার মধ্যে ছোট কারখানা ৯ হাজার। এগুলো শতভাগ হাতের দ্বারা পরিচালিত। মোটামুটি ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা বিনিয়োগেই গড়ে উঠেছে এসব কারখানা। মাঝারি ধরনের কারখানা গড়তে খরচ কোটি টাকার মতো। অন্যদিকে ১০ কোটি টাকা বা তার চেয়ে বেশি বিনিয়োগে বৃহৎ কারখানাও গড়ে উঠছে। এসব কারখানায় আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে উৎপাদন হচ্ছে জুতা। তাদের কাছ থেকে আউট সোর্সিংও করছে দেশের বড় ব্রান্ডগুলো।
জুতা শিল্পকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন দৈনিক ১৫-২০ কোটি টাকার লেনদেন হয় জানিয়ে ভৈরব পাদুকা সমিতির সভাপতি মোঃ আল আমিন মিয়া বলেন, ” ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের অধিকাংশ অঞ্চল থেকে জুতা নেয়ার জন্য ভৈরব আসেন ব্যবসায়ীরা। যাতায়াত ব্যবস্থার সুবিধার কারণে ঢাকা থেকে নিয়মিততই ব্যবসায়ীরা এখানে শিফট করছেন।”
“প্রতিবছর নতুন করে ৩০০টির বেশি কারখানা গড়ে উঠছে” যোগ করেন তিনি।
যেভাবে শুরু
ভৈরবের কালিকাপ্রসাদ গ্রামের আদিকারিগর মৃত ইব্রাহীম মিয়ার হাত ধরেই ভৈরবের জুতা শিল্পের যাত্রা শুরু। পুরান ঢাকা থেকে জুতার কারখানা নিজ এলাকায় স্থানান্তরের মাধ্যমে ভৈরবে প্রথমে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ঢাকায় উৎপাদন ব্যয় বেশি ও চাঁদাবাজির হাত থেকে রক্ষায় ভৈরবে কারখানা স্থানান্তর হলেও ক্রমেই তা বড় হয়ে ঢাকাকে ছাড়িয়েছে ৫-৭ বছর আগে।
এর আগে পঞ্চাশের দশকে বাড়ি থেকে পালিয়ে ভারতে গিয়ে পাদুকা শ্রমিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন ইব্রাহিম। একবছরের মধ্যে নিজ গ্রামের রেনু মিয়া, রুপা গাজী ও হীরা গাজীকে কলকাতায় নিয়ে এই পেশায় যুক্ত করেন। এভাবে কয়েকশ’ লোককে যুক্ত করেন কলকাতার জুতা কারখানায়। কয়েক বছর পর তারাই ঢাকায় ফিরে ব্যবসা শুরু করেন জুতার কারিগর হিসেবে।
ইব্রাহীমের গ্রাম কালিকাপ্রসাদের ব্যবসায়ী ভিক্টর সুজের মালিক রফিকুল ইসলাম (৭০) বলেন, ইব্রাহীম ভাই ভারত থেকে ফেরার পর আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের বুঝিয়ে প্রথমে ছোটো কারখানা দেন। ঢাকার বংশালে কারখানা চালুর পর ওই সময় প্রতি ডজন জুতায় ৫-৬ টাকা লাভ হতো। তবে কম পুঁজিতে ব্যবসা করে সবারই জীবন ভালোভাবে চলছিল। এরপর দলে দলে লোক জুতা ব্যবসায় যুক্ত হয়ে ভৈরবের মানুষের দখলে চলে যায় ঢাকার জুতার কারখানা।
তিনি নিজেও প্রায় ৫০ বছর আগে ঢাকায় এ ব্যবসা যুক্ত হন জানিয়ে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা বলছিলেন রফিকুল।
হাশেম আলী
এখন থেকে দোকানের জুতা ভৈরব থেকে আনব।
তাফসির আলি
ভৈরবের কারখানার জুতা নিখুঁত কারুকাজ এর হয়, যার কারণে চাহিদা ও বেশি।
ফয়েজ আহমেদ
তথ্যবহুল আলোচনা
জিয়া হোসেন
ভৈরব বাজার থেকে আমরা জুতা আনি
ইদ্রিস
সুন্দর তথ্য
আলাওল
নতুন ব্যবসা শুরু করলাম
পলাশ হাসান
আমাদের দোকান কুমিল্লা, আমরা ভৈরব থেকে জুতা আনি
Hanif Miya
ব্যবসায় সম্পর্কে তথ্য পেলাম।
বশির আলি
আমাদের দোকান কেরানিগঞ্জে, আমরাও জুতা ভৈরব থেকে সংগ্রহ করি
কাশেম সরকার
ভৈরবের জুতা শিল্পের ইতিহাস জানতে পারলাম