ভৈরবের পাদুকা শিল্প : উদ্যোগ ও উন্নয়নের নতুন সম্ভাবনা

আগস্ট 22, 2023

ভৈরব কিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত একটি অতিপরিচিত উপজেলা। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত প্রাচীণ ব্যবসাকেন্দ্র। ভৈরব উপজেলার উত্তরে কুলিয়ারচর উপজেলা, পশ্চিমে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলা, দক্ষিণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্চারামপুর উপজেলা এবং পুর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলা অবস্থিত।

ভৈরবে ইউনিয়ন ৭টি, ৯টি ওয়ার্ড, ২৪টি মহল্লা, পৌরসভা ১টি, মৌজা ৩২টি, গ্রাম ৮৪টি। ব্রিটিশ আমল থেকে ভৈরব ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত।যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নতির সাথে সাথে ট্রেডিং নির্ভর ব্যবসায়ের একাধিপত্য ইতোমধ্যে খর্ব হয়েছে যথেষ্ট। কারণ এককালে ভৈরবের সাথে নদীপথে কিশোরগঞ্জ উপজেলার ভাটি এলাকার সকল উপজেলা (ইটনা, মিঠামন, অষ্টগ্রাম, বাজিতপুর, কুলিয়ারচর, করিমগঞ্জ তাড়াইল) নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুড়ি, মোহনগঞ্জ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রায় সম্পূর্ণ, বৃহত্তর সিলেটের প্রায় অধিকাংশের সাথে বাণিজ্যিক নির্ভরতা ছিল। শত শত মালামাল বোঝাই নৌকা রাতদিন বিভিন্ন গন্তব্যে যেতো। ব্যবসায়ীগণ সড়ক এবং রেলপথে ঢাকাসহ বিভিন্ন উৎস থেকে মালামাল মজুদ করে এসব অঞ্চলের চাহিদা মিটাতেন। মেঘনা নদীর উপর সেতু নির্মাণ এবং এতদঞ্চলে গ্রামীণ যোগাযোগ অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়নের ফলে নদীকেন্দ্রিক বাণিজ্যিক পরিবহনের নির্ভরতা কমে আসায় এই পরিণতি। চলমান এ অবস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকে তা ভাবতে ব্যবসায়িরা শংকিত।

গত দেড় দশকে ভৈরবের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ এবং আবাসন অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আবাসন খাতে উন্নয়নের পেছনে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ব্যবসায়িক মহলের অবদান যেমন আছে তেমনি আছে এ অঞ্চলের হাজার হাজার প্রবাসীর অবদান। প্রচলিত/ উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ব্যবসার বাইরে বিনিয়োগ অনিহার কারণে কি ব্যবসায়ী কি প্রবাসী সবারই প্রথম পছন্দ বাড়ি নির্মাণ। এর বাইরে গত কয়েক বছরে জমি কেনায়ও টাকা ঢেলেছেন অনেকেই। যদিও সেই জমির দাম পড়ে গিয়ে অনেকেরেই মাথায় হাত। আবাসন খাতে উন্নয়ন কাজ বলতে যা হচ্ছে তার পুরাটাই অপরিকল্পিত। ভৈরবে বর্তমানে কি পরিমাণ লোকের বসবাস, আগামীতে তা কোথায় গিয়ে ঠেকবে, কারা কি কারণে এসব বাড়ির বাসিন্দা হবে কিংবা বিনিয়োজিত অর্থের বিপরীতে প্রাপ্তির যৌক্তিকতা ইত্যাদি পর্যালোচনা ছাড়াই নিমার্ণ হচ্ছে দালান কোটা। ফলে ব্যবসায়ীর উদ্বৃত্ত টাকা কিংবা প্রবাসীদের প্রেরিত টাকা কোনোটারই অর্থবহ ব্যবহার হচেছ না। এর পেছনের মূল কারণ টকাওয়ালাদের ঝুঁকি গ্রহণের অনীহা। সবাই ভাবেন বাড়ি নির্মাণ হয়ে গেলেই তো মাসিক ভিত্তিতে আয় আসবে। কিন্তু বাড়ি নির্মাণে বিনিয়োগকৃত অর্থের বিপরীতে সম্ভাব্য/প্রাপ্ত আয় কতটা সঙ্গত তা নিয়ে ভাবেন খুব কম লোকই। ব্যাংকের পক্ষ থেকে সহযেগিতার আশ্বাস, পরিবেশ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক সুযোগ থাকার পরও উৎপাদনমুখী এবং কর্মসংস্থানমূলক ব্যাপক বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাবার মতো লোকও নেই এখানে। উৎপাদমুখী উদ্যোগ নিয়ে পাছে “আম-ছালা” সবই না চলে যায় এমন আশংকায় সবার মন।
ভৈরবে এ পাদুকা শিল্পের বিকাশের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ এক সংগ্রামের ইতিহাস। ব্রিটিশ শাসনামলে কলকাতায় জুতা শিল্পের প্রসার ঘটতে শুরু করলে ১৯৩০ সালের দিকে ভৈরব উপজেলার শিমুল কান্দি, গজারিয়া, মানিকদি, কালিকা প্রসাদসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বহু লোক জুতা তৈরির কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ নেয়। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর এসব শ্রমিক দেশে ফিরে পুরান ঢাকা, মিরপুরসহ বেশ কযকেটি এলাকার অবাঙালীদের জুতা তৈরির কারখানায় কাজ শুরু করে। তারা সেখান থেকে দক্ষতা অর্জন করে পরবর্তী সময়ে ভৈরবে নিজ গ্রামে ধীরে ধীরে গড়ে তোলে জুতার কারখানা। তবে প্রকৃত অর্থে এখানে এ শিল্পের বিকাশ ঘটে নব্বইয়ের দশক থেকে। চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম, জায়গা সঙ্কট এবং পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে ইতিমধ্যে অনেকেই ভৈরবে কাজ শুরু করেন।

ভৈরবে উৎপাদিত জুতা আকর্ষণীয় ডিজাইন, তুলনামূলক কম দাম এবং গুণগত মানের কারণে সারা দেশে এখন বেশ জনপ্রিয়। ব্যবসায়ীদের কাছেও বাণিজ্যিকভাবে ভৈরবের জুতা ব্যাপকভাবে সমাদৃত। এ শিল্পের ক্রমবর্ধমান প্রসার ঘটায় স্থানীয় বেকারদের কর্মসংস্থানেরও যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জুতা শিল্পের স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশ ঘটেছে ভৈরবে। জুতা উৎপাদনের ক্ষেত্রে পুরান ঢাকার পরই ভৈরবের অবস্থান হলেও সারা দেশের সাথে রেলপথ, নৌপথ এবং সড়কপথের ত্রিমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সুযোগে দূরাঞ্চলের পাইকার/ব্যবসায়ীরা ঢাকার চাইতে ভৈরবকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

এখানকার জুতা বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে সৌদি আরব, দুবাই বাহরাইনসহ নানা দেশে রফতানিও হচ্ছে।

আর্থিক আকার : ব্যবসার বর্তমান আকার থেকেই এর একটি আর্থিক আকার নিরুপণ করা যায়। যদিও এ ব্যাপারে এখনো কোনো গবেষণা তথ্য আমার নিকট নেই তবুও এর আকার নিয়ে কিছুটা অনুমান করা যায়। বর্তমানে কারখানা ভেদে ন্যূনতম ২৫ লক্ষ টাকা পুঁজি খাটানোর সামর্থ বিবেচনায় দশ হাজার কারখানার উৎপাদন স্তরে এ ব্যবসাটির আর্থিক আকার ২ শত ৫০ কোটি টাকার কম নয়। হাজার খানেক পাইকারি দোকানের গড়ে ন্যূনতম ১৫ লক্ষ টাকা পুঁজি ধরলে এর আকার দাড়ায় ১শত ৫০ কোটি টাকা। আবার মেটরিয়্যালস ব্যবসায় ৫ শতাধিক দোকানের গড়ে ২০ লক্ষ টাকা করে পুঁজি ধরলে এর আকার দাঁড়ায় ১ শত কোটি টাকা। আছে সোলের মাইক্রোশিট এবং প্যাকেট/বক্স তৈরি কারখানা। সব মিলিয়ে টাকার হিসেবে পাঁচ শত কোটির বেশি তো হবেই। যার বাৎসরিক টার্নওভার ২০০০ কোটি টাকার কম নয়। পুঁজির উৎস : পাদুকা শিল্পের গোড়াপত্তন এবং এ শিল্পকে আগলে রাখায় যাদের ভূমিকা বেশি তারা প্রধানত: নিম্নবিত্ত শ্রেণীর। অর্থকড়ি নয় শুধু কায়িক শ্রমই যেখানে পুঁজির প্রাথমিক উৎস। সততা, মেধা, মনন আর দক্ষতার সমন্বিত প্রয়াসই রচনা করে এ শিল্পের ভীত। সে অর্থে শুধুমাত্র মানব সম্পদই ব্যবসাটির প্রাথমিক পুঁজি বলে বিচেচিত। নানা রকম প্রতিকূলতা, উপেক্ষা এবং অবহেলার মাঝেও মাটি কামড়ে পড়ে থাকাদের সংখ্যাই বেশি এখনো এ শিল্পে। জীবন জীবিকার তাকিদে নিরুপায় লেগে থাকাদের অনকেই অবশ্য কালক্রমে শূন্য থেকে কোটিপতিও হয়েছেন। করেছেন বিষয় সম্পত্তি।

5 Comments

  1. ইউনুস বাবুল

    অক্টোবর 11, 2023

    আমি একজন নতুন উদ্দোক্তা।

  2. তাফসির আহমেদ

    অক্টোবর 11, 2023

    ভালো আইডিয়া

  3. akter hossen

    অক্টোবর 11, 2023

    অনেক সুন্দর উপস্থাপনা।

  4. শরীফ

    অক্টোবর 12, 2023

    আমি একজন নতুন জুতার ব্যবসায়ী

  5. ওসামা বিন মামুন

    অক্টোবর 20, 2023

    ভৈরবের পাদুকা শিল্প আরও এগিয়ে যাক

Leave a Comment

Your email address will not be published.