উপমহাদেশে জুতার ইতিহাস পাওয়া যায় বৈদিক কাল পর্যন্ত। রামায়ণ মহাভারতেও উল্লেখ আছে জুতার। প্রশ্ন আসে, তাহলে জুতার আবিষ্কার কবে? বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে পরিষ্কার কোনো ধারণা দিতে পারেননি। তবে এটুকু বলেছেন—৪০ হাজার বছর আগেও যে জুতা ছিল তা নিশ্চিত।
১৫ হাজার বছর আগের স্প্যানিশ গুহাচিত্রে জুতার ছবি পাওয়া গেলে প্রত্নতত্ত্ববিদরা এই দাবি করেন। তবে জুতার ইতিহাস যত দূর পর্যন্তই যাক না কেন, যুগে যুগে জুতা এমনভাবে বিবর্তিত হয়েছে যে এখনকার জুতা ও তখনকার জুতার মধ্যে পার্থক্য হয়ে গেছে ব্যাপক।
যদিও বুট, স্যান্ডেল, লোফার সব ধরনের জুতা সেই আদিকাল থেকেই টিকে আছে। প্রাচীনকালে বিশেষত ঠাণ্ডা অঞ্চলে পা রক্ষা করার জন্য চামড়া দিয়ে মুড়ে দেওয়া হতো।
পা উষ্ণ রাখতে ভেতরে খড়ও দিয়ে দেওয়া হতো বিশেষ ক্ষেত্রে। ১৮০০ শতক পর্যন্ত ছেলে ও মেয়েদের জুতায় খুব একটা পার্থক্য ছিল না।
১৮০০ শতকের মাঝামাঝি জুতা আলাদা একটি সামাজিক মর্যাদা ও ফ্যাশনের উপকরণ হয়ে ওঠে। পুরুষ ও নারীর জন্য আলাদা আলাদা নকশার জুতার প্রণয়ন হয় এই সময়েই।একটি অলিখিত নিয়ম হয়ে যায় যে পুরুষের জুতার হিল এক ইঞ্চির বেশি হবে না, যেখানে নারীর জুতার ক্ষেত্রে এই সীমা ছিল না। কালো রঙের জুতাও জনপ্রিয়তা পায় এই সময়ের মধ্যেই। স্বামী প্রিন্স আলবার্টের মৃত্যুর পর নারী ভিক্টোরিয়ার দীর্ঘ শোকের সময়েই কালো রঙের জুতা একটি ফ্যাশন উপকরণে পরিণত হয়। কথিত আছে, তিনি নাকি ওই শোকের সময় কালো রঙের জুতা বেশি পরতেন। ধারণা করা হয়, কালো রঙের জুতার ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়ার কারণও সেটিই।
ওই সময় পর্যন্ত জুতা তৈরিতে কাঠ, কাপড় ও চামড়াই ব্যবহার হতো। বেশির ভাগ কাজ হাতেই করতে হতো বলে জুতার বিবর্তনও ছিল খুবই ধীর। তবে ১৯০০ শতকে যন্ত্র বিপ্লব হওয়ার পর শ্রম কমে যায় এবং বেশির ভাগ বিষয়ই স্বয়ংক্রিয় হয়ে ওঠে। ওই কারণে প্রতিনিয়তই আসতে থাকে নতুন নতুন নকশার জুতা।
জুতা কেন?
মোটা দাগে ধুলাবালি, ময়লা এবং রোগজীবাণু থেকে আমাদের সার্বক্ষণিক রক্ষা পাওয়ার জন্যই জুতার ব্যবহার। তবে ক্ষেত্রভেদে আভিজাত্য প্রকাশের মাধ্যমও হয়ে ওঠে জুতা। অনেকেই নিজের ব্যক্তিত্ব ও আভিজাত্য প্রকাশের জন্য জুতা ব্যবহার করে থাকেন। আবার আবহাওয়ার প্রভাব এড়াতেও জুতা ব্যবহার করা হয়। যেমন—শীতকালে এক ধরনের জুতা, বর্ষকালে এক ধরনের জুতা এবং গরমকালে আরেক ধরনের জুতা ব্যবহার করা হয়।
কোন জুতা কেন পরবেন?
শুরু করা যাক ঘর থেকে। কত জোড়া জুতা আছে? ঘরে পরার জন্য এক জোড়া। টয়টেলের জন্য এক জোড়া। বাইরে হাঁটার জন্য এক জোড়া। অফিসের জন্য ‘ফরমাল শু’ এক জোড়া। বাইরে ক্যাজুয়াল চলার জন্য এক জোড়া। এই প্রতি জোড়া জুতার নকশা, কার্যকারিতা ও তৈরির উপাদানে আছে ভিন্নতা।
যে জুতা পানির সংস্পর্শে থাকবে সেটিকে হতে হবে প্লাস্টিকের। আর যেটি বাসায় পরবেন সেটি হতে হবে হালকা। অফিসের জুতাটি হওয়া চাই চামড়ার আরামদায়ক জুতা। আর ক্যাজুয়ালটি হতে হবে ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই। তবে মোটা দাগে প্রতিটি জুতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরামটাই মুখ্য।
ঋতুভেদে জুতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটু ভিন্নতা আনলে সাময়িক কিছু সমস্যা পাশ কাটানো যায়। যেমন—বর্ষাকালে জুতার সোলে গ্রিপ ভালো থাকলে পিছলে পড়তে হবে না। গরমে শু না পরে স্যান্ডেল টাইপের খোলামেলা জুতা আরামদায়ক হবে। তবে চাকরীজীবীদের মধ্যে যাদের ফরমাল জুতা পরতেই হয় তাদের নির্বাচন করতে হবে হালকা কিছু। চামড়ার জুতা এ ক্ষেত্রে বেশ জুতসই। আর শীতকালে কেডস টাইপের জুতা পায়ে উষ্ণ অনুভব দিয়ে ঠাণ্ডা থেকে মুক্তি দেবে।
উচ্চতার প্রভাবও আছে জুতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে। সাধারণত যারা একটু খাটো তারা উঁচু জুতা পছন্দ করেন এবং যারা একটু লম্বা তারা করেন না। উঁচু জুতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে পায়ে ব্যথা না হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, পায়ের গোড়ালি ব্যথার অন্যতম কারণ হচ্ছে জুতার ধরন।
কেবল ব্যথা নয়, জুতা নির্বাচনে পায়ের ত্বকের ধরন নিয়েও ভাবতে হয়। ত্বক যদি অ্যালার্জিক হয়, তাহলে আঁঁটসাঁট জুতা না পরাই উত্তম। একটু খোলামেলা হলে বেশ আরাম পাওয়া যায়।
জুতা কেনার আগে
জুতা কেনার সময় ক্রেতা সব সময়ই চান যেন তিনি যে কারণে জুতাটি কিনছেন সে কাজটি যেন সারে এবং জুতাটি টেকসই হোক। প্রয়োজন ও স্থায়িত্বের মিশেল ঘটানোটাই এখানে একজন ক্রেতার মূল বিবেচ্য বিষয়।
♦ গাম থেকে সেলাই উত্তম। তাই সোলের সঙ্গে জুতার মূল অংশ যদি সেলাই করে জোড়া দেওয়া থাকে, তাহলে বুঝতে হবে এই জুতার সোল টেকসই হবে।
♦ সোল নির্বাচনের ক্ষেত্রে কাঠের সোল থেকে বিরত থাকে উত্তম। কারণ কাঠের সোল বাঁকায় না। ফলে হাঁটার সময় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।
♦ আপনার পছন্দের জুতাটি যদি চামড়ার হয়ে থাকে, তাহলে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে জুতাটি আসলে চামড়ার কি না।
♦ যদি কোনো ব্র্যান্ডের দোকান থেকে কিনেন, তাহলে তারাই বলে দেবে কোনটি আসল চামড়া এবং কোনটি কৃত্রিম। তবে সমস্যাটা হয় লোকাল দোকান থেকে কিনতে গেলে। এখানে আপনাকেই বুঝতে হবে চামড়া আসল নাকি কৃত্রিম। এ ক্ষেত্রে জুতাটি ধরে দেখুন ও চাপ দেন। জুতায় ভাঁজ পড়লে এবং তা ধীরে ধীরে পূর্ববর্তী অবস্থায় চলে গেলে এবং জুতা থেকে চামড়ার গন্ধ এলে ধরে নিতে পারেন জুতাটি চামড়ার তৈরি। কৃত্রিম চামড়া কিছুটা ফোমের মতো অনুভব হবে। এটা একটি প্রাথমিক ধারণা মাত্র।
♦ কেনার আগে অবশ্যই জুতার মাপ সম্পর্কে জেনে নিন। যদি নিজে গিয়ে না কেনেন, তাহলে এই মাপটি আপনার জন্য কাজে আসবে।
♦ পায়ে দিয়ে কিছুক্ষণ হেঁটে দেখবেন আপনার অস্বস্তি লাগছে কি না। জুতার কিনারাগুলো মসৃণভাবে ফিনিশিং করা কি না তা অবশ্যই দেখে নেবেন। কারণ এসব স্থানের ফিনিশিং ভালো না হওয়ার কারণে পায়ে ফোস্কা পড়ে। শোরুম থেকে কেনার সময় মোজা পরে ট্রায়াল দেবেন। খালি পায়ে ট্রায়াল দিয়ে জুতা কিনে ফেললে পরে মোজা পরার পর জুতা বেশ আঁঁটসাঁট হয়ে যেতে পারে। নিজের মোজাটি সঙ্গে নিয়ে নেবেন। কারণ দোকানে যেসব মোজা পরানো হয় সেগুলো অনেকেই পরেন। এতে ছোঁয়াছে চর্মরোগ ছড়াতে পারে।
♦ জুতার শুকতলাটি কেমন তা দেখে নেবেন। কারণ এটির ওপরই আপনি পা দেবেন। তাই এখানে কোনো আপস না করাই উত্তম। আর ভালো জুতায় এক জোড়া শুকতলা অতিরিক্ত দেওয়া হয়।
জুতা পাওয়া যাচ্ছে কোথায়
সারা দেশের প্রতিটি বাজারেই একাধিক জুতার দোকান আছে। সেই সঙ্গে পাওয়া যায় অলিগলির মোড়ে এমনকি ভ্যানেও। ঢাকায় জুতার প্রধান মার্কেটগুলো হচ্ছে এলিফ্যান্ট রোড, গুলিস্তান, নিউ মার্কেট, মৌচাক মার্কেট, মিরপুর, চন্দ্রিমা সুপারমার্কেট, মতিঝিল, স্টেডিয়াম এলাকা, ঢাকা কলেজের বিপরীত, ফার্মগেটের ফুটপাত। তালিকা লিখে শেষ করা যাবে না।
ব্র্যান্ডের জুতা কিনতে চাইলে এপেক্স, বাটা, বে-এমপোরিয়াম, ক্রিসেন্ট, জেনিস, ওরিয়নসহ অনেক ব্র্যান্ডের শোরুম বাংলাদেশের বিভিন্ন মার্কেটে পাওয়া যায়।
দামদর
ব্র্যান্ডভেদে দামের সীমা ৮০০ থেকে ১০ হাজার বা তারও অধিক। ছোটদের জুতার দাম ২৫০ থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে। ব্র্যান্ডের দোকানে দরদাম করার কোনো সুযোগ নেই। নির্ধারিত দামের মধ্যেই আপনাকে কিনতে হবে। তবে লোকাল বাজার থেকে জুতা কেনার সময় একটু খোঁজখবর নিতে হবে। দরদাম করে কিনতে হবে। আপনার যে দাম মনে হবে সেই দামই আপনি বলবেন। বিক্রেতার বিশাল দাবির মুখে লজ্জায় কম দাম বলতে সংকোচ বোধ করলে ঠকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে লোকাল মার্কেটে।
তমালিকা মির্যা
জুতার পরিবর্তন।।।
আক্তার মিয়া
জুতা নিয়ে ভালো ভালো আলোচনা করা হয়েছে
ইসলাম মিয়া
চামড়ার জুতাই আরাম বেশি
আসিফ আলী
চামড়ার জুতা টেকসই
রাসেল
চামড়ার জুতার দাম সব সময় বেশি থাকে।।।
মামুল মিয়া
ফুটপাতের জুতার দাম তুলনামূলক কম হয়