গ্রামের বেড়ে উঠা ১৮ বছরের একজন যুবক। অভাবের সঙ্গে লড়াই করে আর পারছিলেন না। তাই অভাবজয়ের স্বপ্ন নিয়ে বন্ধুর পরামর্শে পাড়ি জমান কলকাতায়। কাজ নেন মিশুয়াবাজার স্ট্রিটের একটি পাদুকার কারখানায়।
ভৈরবে পাদুকাশিল্পের বিকাশ: ইব্রাহিমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাধীনতার পর প্রায় দুই দশক বড় ধরনের সমস্যা ছাড়া ভালোভাবেই ব্যবসা করেন তাঁরা। বিপত্তির শুরু ১৯৯০ সালের দিকে। পুরান ঢাকায় চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যে ব্যবসায়ীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। বিভিন্ন ব্যয়ও বাড়ে অস্বাভাবিকভাবে। কমে আসে লাভ। অনেকেই তখন ঢাকা ছেড়ে ভৈরবে ব্যবসা গড়ে তুলতে থাকেন। ধীরে ধীরে ভৈরবে বিকশিত হতে থাকে পাদুকাশিল্প। ঢাকা ছাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কালিকাপ্রসাদ গ্রামের একটি কারখানার মালিক হান্নান মিয়া (৬০) বলেন, ওই সময় চাঁদাবাজেরা হাতে হলুদ নিয়ে কারখানায় ঢুকত। দেখিয়ে জিজ্ঞেস করত—এটা কী? আমরা বলতাম অলদি (হলুদ)। চাঁদাবাজেরা বলত, ‘চাঁদা দেও জলদি’।সফল যাঁরা: পাদুকাশিল্পের বদৌলতে সচ্ছলতার মুখ দেখেছেন, তাঁদের একজন ‘অবাগ’ শু ফ্যাক্টরির মালিক আবদুল লতিফ। বছর দশেক আগে মাত্র তিনজন কারিগর নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন। আজ তাঁর কারখানায় ৩৫ জন কারিগর। নিজের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে লতিফ বলেন, ‘১০ বছর আগের লতিফ আর আজকের লতিফ একেবারেই আলাদা।’ তাঁর মতো করেই ভাগ্য বদলাতে সক্ষম হয়েছেন আরও অনেকে।ভৈরবে পাদুকাশিল্পের সাফল্য দেখে কুলিয়ারচর ও বাজিতপুর উপজেলাতেও পাদুকাশিল্প গড়ে উঠছে। দিন দিন তা বিকশিতও হচ্ছে।
ঈদের বাজারে ব্যস্ততা: এখন চলছে সেই মৌসুম। কারখানাগুলোতে দিন-রাত কাজ চলছে। এই ব্যস্ততা থাকবে ব্যবসায়ীদের ভাষায় ‘চান রাত’ পর্যন্ত। গত শনিবার ভৈরব পৌর শহরের কমলপুর হাজি মার্কেটে গিয়ে কথা হয় কয়েকজন কারখানার মালিক ও কারিগরের সঙ্গে। তাঁরা জানালেন, একটি জুতা তৈরি হতে আপার, সোল, ফিটিং, ফিনিশিং, স্ক্রিন প্রিন্ট—এই পাঁচ ধাপে কারিগরের হাত লাগে। পরে প্যাকেট ভর্তি করে বাজারজাত করা হয়।চায়না শু ফ্যাক্টরির মালিক লিটন মিয়া জানান, ভৈরবে এখন স্যান্ডেল, পেনসিল হিল, ফ্ল্যাট হিলসহ বিভিন্ন ধরনের জুতা তৈরি হচ্ছে।ভৈরবে জুতার কারখানাগুলো ঘিরে গড়ে উঠেছে আরও কয়েকটি ব্যবসা। ভৈরব পাদুকা কারখানার মালিক সমিতির হিসাবমতে, জুতা তৈরির উপকরণ নিয়ে উপজেলায় অন্তত ৮০০ দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকানে চামড়া, রেক্সিন, ফোম, হিল, কভার, সুতা, বোতাম, আঠা ইত্যাদি বিক্রি হয়।
বাজারজাতের সুবিধা: ভৈরবের কারখানা থেকে তৈরি হওয়া জুতা বাজারজাত করার জন্য বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে ‘মিজান মার্কেট’ নামের ছয়তলা একটি পাইকারি মার্কেট। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, ঢাকার ব্যবসায়ীরা এখান থেকেই জুতা কিনে নিয়ে যান। ব্যবসায়ীরা জানান, গুণগত মানের তুলনায় ভৈরবের জুতা তুলনামূলক সস্তা।কারখানার মালিক সমিতির হিসাবমতে, প্রতিদিন গড়ে এখানে আট থেকে ১০ কোটি টাকার লেনদেন হয়ে থাকে। ঈদের মৌসুমে তা বেড়ে যায়।জুতা কারখানা গড়ে তুলতে বেশি পুঁজিরও প্রয়োজন হয় না। সাধারণ আকারের কক্ষ আর হাজার পঞ্চাশেক টাকা পুঁজি নিয়ে একটি কারখানার যাত্রা শুরু করা যায়।
করিম মিয়া
আমি ভৈরবের একজন পাইকারি ক্রেতা , সেই সুবাদে বলতে পারি পাইকারি জুতার জন্য ভৈরব বাজার খুবই ভাল।
মনির হোশেন
এখানকার তৈরি জুতা দাম অনুযায়ী মজবুত ও আরামদায়ক হয়, তাই সল্প পুঁজি তে আমার ব্যবসা ভালোই চলছে।
সেলিম মিয়া
আমরা প্রতি মাসেই ভৈরব থেকে জুতা নিয়ে আসি, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়াতে মালামাল সরবরাহ করতে আমাদের খরচ কম হয়।
কবির চৌধুরী
ভৈরবের জুতা অনেক ভালো
রাব্বী
ভৈরবে অনেক কারখানা আছে।
আফতাব হোসেন
ব্যবসায়ীক আইডিয়া টা সুন্দর, নতুন উউদ্দোক্তাদের জন্য অনেক কিছু জানার আছে