“পাদুকা” এসেছে সংস্কৃত শব্দ “পদ” এবং “কা” থেকে । যাকে আসলে আমরা সহজ বাংলা ভাষায় জুতা / স্যন্ডেল হিসাবে চিনি । মুলত আমাদের পা কে পথের ধুলো বালি ময়লা এবং আঘাত থেকে রক্ষা করার জন্য আমরা যে জিনিস টি দিয়ে আমাদের পা কে আবৃত রাখি তাহাই পাদুকা ।
১) পৃথিবীর প্রাচীনতম জুতা- আজ থেকে ৫,৩০০ বছর আগে ইতালী অস্ট্রিয়ার সীমান্তে আল্পস পর্বতে সমদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০ হাজার ফুট উচুতে সমাধিস্থ হন ওজিম্যান। “ওজি ম্যান” এর ব্যবহৃত জুতা হল পৃথিবীর প্রাচীনতম চামড়ার জুতা। ১৯৯১ সালে আবিস্কৃত ঘাস এবং হরিনের চামড়া দিয়ে তৈরী সে জুতার অবিকল প্রতিকৃতি।
২) প্রাচীন মিশরীয়দের ব্যবহৃত জুতা
৩) প্রাচীন গ্রীকদের জুতা
৪) পশ্চিম গোলার্ধের অন্যতম প্রাচীন জুতা প্রায় ৬ হাজার বছরের পুরন জুতা হল আমেরিকার আনাসাজি উপজাতির জুতা। তারা ইউক্কা গাছের তন্তু দিয়ে বুনে বুনে বানাতো তাদের জুত। আনসাজিদের সমাধি থেকে উদ্ধার করা আনাসাজি জুতা-
৫) মূল্যবান ধাতুর উপর মুল্যবান পাথর বসানো প্রাচীন ভারতের জুতা।
৬) চামড়ার উপর সোনার বোতাম বসানো আফ্রিকার ঘানার জুতা।আফ্রিকার আসান্তে উপজাতির শাসকদের পা মাটি স্পর্শ করা নিষিদ্ধ। তাদের সোনার অলঙ্কার খচিত জুতা ছিল আভিজাত্যের প্রতিক। রাজার জুতা যদি ভেঙ্গে গিয়ে পা মাটি ছুয়ে ফেলে তো সর্বনাশ। সুতরাং রাজার সাথে সাথে অতিরিক্ত এক জোড়া স্যান্ডেল জুতা বয়ে নিয়ে যেত একজন জুতা বাহক।
৭) আসান্তে উপজাতির সোনার জুতা
৮) চীণ দেশে অভিজাত মহিলাদের পা ছোট রাখাকে বলা হত “জিন লিয়ান” বা “সোনালী পদ্ম পা” আর ইংরাজীতে বলা হত “Bound Feet” । হাজার বছরের ও বেশী সময় ধরে চীনের হান উপজাতিদের মধ্যে এ উদ্দেশ্যে জুতা ব্যবহৃত হত। কত ছোট ছিল সে জুতাগুলো।
৯) গথিক জুতা– মধ্য যুগে পোষাকের মত জুতাও ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। ইংল্যান্ডে গথদের সময় সামনের দিকে ছুচালো জুতা প্রচলিত ছিল। ১৪৬৩ খৃস্টাব্দে রাজা এডওয়ার্ড-৪আইন করেন যে জুতার দৈর্ঘ হতে হবে পদমর্য্যাদা অনুযায়ী।অর্থাৎ সবচে’ বড় জুতা পরার অধিকার হল রাজার নিজের। সে সময়ের নাইটদের ব্যবহৃত জুতা
১০) টিউডরদের জুতা – টিউডর রাজ বংশ ১৪৮৫ সাল থেকে ১৬০৩ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ড শাসন করেন। ধাতুর তৈরী তাদের জুতার সামনের দিকটা থাকত অপেক্ষাকৃত চওড়া।এই ধরনের জুতাকে বলা হত “Duck Bill shoes” ।
১১) ইসলাম এবং জুতা- ৭ম শতাব্দী থেকে শুরু হয়ে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে মধ্যপ্রাচ্য ইউরোপ এবং এশিয়াতে। ইসলাম শব্দের অর্থ হল আত্মসমর্পন। সৃস্টিকর্তা আল্লাহ’র নিকট আত্মসমর্পনে নামাজের সময় মসজিদে ঢুকতে পা থেকে জুতা খুলতে হয়। সহজে খোলা এবং পরা যায় এমন জুতার প্রচলন আছে মধ্যপ্রাচ্যে অনেক বছর আগে থেকেই। পেছন খোলা এমন জুতার নাম হল বাবুশ ( Babouche )।
১২) বৌদ্ধ ধর্মে জুতা- আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে বৌদ্ধ ধর্ম প্রবর্তন হয়। তার পর প্রায় পাচশ’ বছর বৌদ্ধ মূর্তির পরিবর্তে গৌতম বুদ্ধের পায়ের ছাপকে উপাসনা করা হত। বৌদ্ধ ধর্মগুরুদের ব্যাবহৃত জুতা-
ইহুদীধর্মে জুতা- ইহুদি ধর্মগুরুরা তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জুতা পরেই তাদের ধর্মবানী বিলিয়ে থাকেন, কারন হল তারা বিশ্বাস করেন সৃস্টিকর্তার দেওয়া সমস্ত পরিধেয়র জন্য তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিৎ। কিন্তু কেউ মারা গেলে তার অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সময় জুতা পর নিষিদ্ধ। কারন হল জুতা ধনসম্পদের প্রতীক। মৃতের অনুপস্থিতিতে সবাই গরীব হয়ে গেছে –এই বিশ্বাস থেকেই ইহুদীরা তখন জুতা ব্যবহার করেন না।
ইহুদীদের মধ্যে নিয়ম আছে যে কোন পুরুষ মারা গেলে মৃতের ভাই বিয়ে করবেন মৃতের পত্নী সদ্য বিধবাকে। কারন হল এতে করে বিধবা এবং সন্তান সন্ততিরা বাঁচার অবলম্বন খুজে পায় । কিন্তু কেউ যদি বিয়ে করতে রাজী না হয় তখন হালিজাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে বিধবা মৃতের ভাই এর পায়ে হালিজাহ জুতা পরিয়ে দিয়ে তা আবার খুলে নেন সবার সামনে। এর মানে হল যে বিধবা মৃতের ভাইকে বিয়ে করার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি দিলেন। নীচের ছবি্তে হালিজা জুতা।